টাটকা ইলিশ চেনার উপায়

নিউজ ডেস্ক: মাছের মধ্যে সবার পছন্দের তালিকায় প্রথমেই যে নামটি আসে তা হলো ইলিশ। সারা বছরই বাজারে কম-বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। ইলিশের স্বাদ নির্ভর করে এলাকার ওপর। যেমন পদ্মার ইলিশের চেয়ে স্বাদে ভিন্ন বরিশালের ইলিশ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইলিশ মাছের আসল পার্থক্য বোঝা যাবে খাওয়ার সময়। ইলিশ শুধু স্বাদের জন্যই সেরা নয়, এর পুষ্টিগুণও রয়েছে প্রচুর।

কিন্তু কেনার সময় আমরা অনেকেই আসল ইলিশ চিনতে পারি না। ইলিশ কেনার সময় ভালোমানের দেশি ইলিশ চিনে কিনতে হবে। নয়তো ইলিশের স্বাদ যেমন পাওয়া যাবে না, তেমনি টাকাও নষ্ট হবে। এদিকে গত ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এ সময় বাজারে হিমাগারে থাকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য হতে হবে সচেতন, চিনতে হবে রুপালি মাছের আসল রাজাকে। তবেই পাওয়া যাবে রাজকীয় স্বাদ।

জেনে নিন টাটকা ইলিশ চেনার উপায়

১. ইলিশ মাছ টাটকা আছে কি না তা যাচাই করতে সেটি শক্ত না নরম পরীক্ষা করুন। যদি কোনো ইলিশ অত্যন্ত নরম হয় কিংবা হাতে নিতেই মাথা ও লেজ ঝুলে যায় তা হলে বুঝবেন সেটি অনেক পুরোনো। এমন ইলিশের স্বাদ বেশি হয় না।

২. ইলিশ মাছ কেনার সময়ে ভালো করে কানকো দেখে নেবেন। মাছের কানকো লাল থাকলে বুঝবেন সেটি টাটকা। যদি কানকো বাদামি কিংবা ধূসর হয় তা হলে বুঝবেন সেটি মোটেও তাজা নয়।

৩. আর যে ইলিশের মুখ যত সরু হয় সেটির স্বাদ তত বেশি। তাই বাজারঘুরে সরু মুখের ইলিশ কিনুন।

৪. একই সঙ্গে ইলিশ মাছের চোখও দেখবেন। নীল, স্বচ্ছ কিংবা উজ্জ্বল চোখের ইলিশের স্বাদ অনেক বেশি হয়। আবার অনেক ইলিশের চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে থাকে। সাধারণত হিমঘরে রাখলে মাছ এমন হয়ে যায়। সেই মাছে স্বাদ ভালো হয় না।

৫. ইলিশ কেনার সময় সবার আগে যা যাচাই করতে হবে, তা হলো ঘ্রাণ। তাই অবশ্যই মাছ কেনার সময় সেটি থেকে ঘ্রাণ বের হচ্ছে কি না তা দেখে কিনুন।

৬. আসল ইলিশ থেকেই প্রত্যাশিত গন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু নকল বা চান্দিনা ইলিশ তার সুঘ্রাণ হারিয়ে ফেলে।

৭. ইলিশ মাছ টাটকা কি না বুঝতে হলে হাতে ধরে দেখতে হবে। যে ইলিশ মাছ শক্ত হবে বাজারে বুঝবেন সেটি টাটকা। হাতে নেওয়ার পর যদি মাছটা মাথা বা লেজের দিক বেঁকে যায়, বুঝবেন সেই মাছ পুরোনো।

এদিকে ইলিশ মাছের মতো দেখতে সার্ডিন মাছও পাওয়া যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা এগুলো ইলিশ বলেই বিক্রি করেন। সার্ডিন মাছ জেলেদের কাছে পরিচিতি চন্দনা, যাত্রিক, টাকিয়া, পানসা, খায়রা ও সাগর চাপিলা নামে। কিন্তু শহরে এনে অসাধু ব্যবসায়ীরা সার্ডিন বা চন্দনা মাছকে ইলিশ বলেই বিক্রি করে।

সার্ডিন ও ইলিশ মাছের পার্থক্য

১. সার্ডিন বা চন্দনা ইলিশের দেহের দৈর্ঘ্য ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ইলিশ বেশ বড় (৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত) হয়ে থাকে। ইলিশ মাছ আকারে যত বড় হবে, তত তার স্বাদ বেশি হয়। আকারে বড় ইলিশকে অনেকে পাকা ইলিশ বলে অভিহিত করে থাকেন। সমুদ্র থেকে ইলিশ নদীতে ঢোকার পরে নদীর উজানে মানে স্রোতের বিপরীতে যখন চলে, সে সময় এদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমা হয়। এই ফ্যাট বা তেলের জন্যই ইলিশের স্বাদ হয়।

২. সার্ডিনের মাথার আকৃতি ছোট ও অগ্রভাগ ভোতা। আর আসল ইলিশের মাথার আকৃতি লম্বাটে ও অগ্রভাগ সুচালো। আর পেটটা হবে মোটা। লেজের একটু ওপর থেকেই মাছটা গোল হতে শুরু করবে। পদ্মা ও মেঘনার ইলিশ একটু বেশি উজ্জ্বল বা চকচকে হবে। মাঝ বরাবর একটি হালকা লাল রঙের দাগ থাকে। সাগরের ইলিশ তুলনামূলক কম উজ্জ্বল।

৩. সার্ডিনের পিঠের পাখনার অগ্রভাগে এবং পুচ্ছ পাখনার কিনারা ঘোলাটে। কিন্তু ইলিশের পিঠের পাখনার অগ্রভাগে এবং পুচ্ছ পাখনার কিনারা অনেকটা সাদাটে।

৪. সার্ডিনের চোখের আকৃতি তুলনামূলক বড়। আসল ইলিশের চোখের আকৃতি তুলনামূলক ছোট থাকে।

৫. সার্ডিনের পিঠের পাখনার উৎসে একটি কালো ফোঁটা রয়েছে। আসল ইলিশের কানকুয়ার পরে একটি বড় কালো ফোঁটা এবং পরে অনেক কালো ফোঁটা থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *