কানাডা যাত্রীদের ফেরত পাঠানোয় বিমানের বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা নয়

নিউজ ডেস্ক:

পর্যটন ভিসায় কানাডা গমণেচ্ছু ৪৫ যাত্রীকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় চলছে তোলপাড়। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার মধ্যে এই যাতীদের কানাডা যেতে কেন বাধা দেওয়া হলো তা জানতে বাংলাদেশ বিমানের চেয়ারম্যানের কাছে আইনী নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

মঙ্গলবার এই আইনী নোটিশ প্রদান করেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী কাজী মোশাররফ রাশেদ। নোটিশ প্রাপ্তি ৭ দিনের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান মোস্তাফা কামাল উদ্দীনকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পর্যটক ভিসায় কানাডার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া সিলেটের ৪৫ জন যাত্রীকে ৭ নভেম্বর ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। আমন্ত্রণপত্র সঠিক না থাকার অভিযোগ এনে এই ৪৫ যাত্রীকে অফলোড করে ফেরত পাঠায় বিমান কর্তৃপক্ষ।

এরপর থেকে এ ঘটনা নিয়ে সিলেটে চলছে তোলপাড়। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন- বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও বিমান কর্তৃপক্ষ কেন যাত্রীদের আটকাবে? বিমানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সুবিধা আদায়ের জন্য যাত্রী হয়রানি ও জিম্মি করারও অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে।

মঙ্গলবার জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ সিলেটের পক্ষে আইনজীবী কাজী মোশাররফ রাশেদের আইনী নোটিশে বলা হয়, কানাডা হাইকমিশন কর্তৃক ওই যাত্রীদের সংশ্লিষ্ট ভিসা আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট আমন্ত্রণপত্রটি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে ইতিমধ্যে প্রত্যেককে বৈধ ভিসা ইস্যু করেছে। পরে প্রত্যেক যাত্রী কানাডা যাওয়ার নির্মিত্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত তারিখের নির্ধারিত মূল্যের বিমান টিকেট ক্রয় করে। পরবর্তীতে সিলেট ওসমানী বিমান বন্দরে তাদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঢাকা এসে ট্র্যানজিট লাউঞ্জে টরন্টোগামী বিমানের কানেকটিং ফ্লাইটের অপেক্ষায় ছিলেন।

এসময় হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের ৬নভেম্বর কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনী ভাবে ও কোন আইনগত অধিকার ছাড়াই সংশ্লিষ্ট ৪২ জন যাত্রীর কানাডা ভিসার সংশ্লিষ্ট আমন্ত্রণপত্র সঠিক কি না তা, যাচাই-বাছাই করতে চাওয়ার মাধ্যমে তা ভূয়া উল্লেখে তাদের বৈধ ভিসা থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট যাত্রীদেরকে কানাডা যাওয়ার বাধাগ্রস্থ করে তাদেরকে ফেরত পাঠান।

কেন ঐ দিনে অর্থাৎ হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তথা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে কর্তব্য অবহেলা ও অন্যায়ভাবে, বেআইনী ও বিনা অধিকারে যাত্রী হয়রানীর অভিযোগে, সংশ্লিষ্ট ভুক্ত ভোগীদের পক্ষে তাদের মানহানি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তা অত্র নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়।

তবে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, কানাডা ইমিগ্রেশনের মতামতের ভিত্তিতে নিয়ম মেনেই এই যাত্রীদের কানাডা যেতে দেওয়া হয়নি। একটি ভুয়া বিয়ের আমন্ত্রণে এই ৪৫ জন একসাথে কানাডা যেতে চাচ্ছিলেন। কানাডায় থাকার জন্য হোটেলও বুকিং দেননি তারা।

বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, সব এয়ারলাইন্সেই বিদেশি যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাছাই বাছাই করে। কারণ ভুয়া কাগজপত্রের যাত্রী পরিবহন করলে এয়ারলাইন্সকেক বড় অংকের জরিমানা গুণতে হতো।

হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানায়, ৬ নভেম্বর  রাতে ওই ৪৫ জন ট্রানজিটে অপেক্ষা করার সময় বিমানের পাসপোর্ট চেকিং ইউনিটের সদস্যদের সন্দেহ হয়। তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের প্রায় সবার সাদা পাসপোর্টে কানাডার ভিসা লাগানো। এতে তাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। এসময় বিমান কর্মকর্তারা তাদের আমন্ত্রণপত্র ও হোটেল বুকিং দেখতে চান। তখন তারা দেখতে পান, ওই যাত্রীদের সবাই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কানাডা যাচ্ছেন। আর হোটেল বুকিংয়ের পরিবর্তে তারা কিছু বাড়ি ভাড়ার কাগজপত্র দেখান।

এ প্রসঙ্গে সোমবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিলেট কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুস সাত্তার বলেন, ঘটনাটি শাহজালাল বিমানবন্দরে ঘটেছে। আমি যতদূর শুনেছি তাদের আমন্ত্রনপত্রে কানাডায় গিয়ে হোটেলে থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও তারা সেখানে হোটেল বুকিং না করে বাসা ভাড়া করেন। এ থেকে বিমান কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। এরপর খোঁজ নিয়ে আরও কিছু কাগজপত্রে গড়মিল পাওয়া যায়। তখন কানাডার এম্বেসিকে তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, এম্বেসি থেকে জানানো হয়, তাদের ‘ডকুমেন্ট ফলস’। তাদের আইন অনুযায়ী এটা ফায়ার কোড ভায়োলেশন।

কানাডা ইমিগ্রেশনের বদলে বাংলাদেশ বিমান থেকে এসব কাগজপত্র পরীক্ষা করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাত্রীর সব কাগজপত্র পরীক্ষার দায়িত্ব এয়ারলাইন্সের।সব এয়ারলাইন্সই এটি করে। কারণ ভুল ডকুমেন্টে যাত্রী নিলে এয়ারলাইন্সকে বড় অংকের জরিমানা গুণতে হয়।

একই তথ্য জানিয়েছেন এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট বাংলাদেশ (আটাব) সিলেটের সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিলও। তিনি বলেন, সব এয়ারলাইন্সেই ভিসা পরীক্ষা করার জন্য একজন প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা থাকেন। তারা ভিসা ভালো করে পরীক্ষা করে থাকেন।যাত্রীর ব্যাপারে সন্দেহ হলে অন্য কাগজপত্রও তারা দেখতে পারেন। কারণ যাত্রীকে গন্তব্য থেকে ফেরত পাঠালে এয়ারলাইন্সকে মোটা অংকের জরিমানা গুণতে হয়। কানাডার ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি প্রায় ১৯০০ ডলার জরিমানা দিতে হয় এয়ারলাইন্সকে। এই জরিমানা থেকে বাঁচতেই তারা কাগজপত্র পরীক্ষা করে।

তবে কাগজপত্র পরীক্ষার নামে অনেকসময় যাত্রীদের হয়রানি করা হয়, বৈধ যাতীদেরও আটকে দেওয়া হয় এবং অবৈধ সুবিধা নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রী পরিবহন না করলেও তো তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়। এছাড়া হয়রানি করলে যাত্রীরা তো বিমানের বদলে অন্য এয়ারলাইন্সের দিকে ঝুঁকবে। এতে তারা আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *